সিসিএন অনলাইন ডেস্ক:
স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-পরিজন নিয়ে আপনার বন্ধুর যাকে বলে একেবারে ভরা সংসার। সপ্তাহান্তে ঘুরতে যাচ্ছে দূরে কোথাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের আহ্লাদী স্থিরচিত্র দেখে ভাবছেন—আহা, কত ভালোই না আছে ওরা! বেশ লোভনীয় একটা চাকরি বাগিয়ে দিব্যি এক সুখের জীবনে ঢুকে গেল কাছের কোনো বড় বা ছোট ভাই। দূর থেকে দেখে চিনচিনে আফসোস হচ্ছে—ইশ্, কী ভাগ্য!
ঝুম বৃষ্টিতে হাতে হাত ধরে ভিজতে ভিজতে ফুটপাত ধরে হাঁটছে অপরিচিত যুগল। যেন পৃথিবীর সব সুখ বগলদাবা করে হেঁটে যাচ্ছে ওরা। আপনার বুকের ভেতর দলা পাকিয়ে উঠছে হাহাকার—কতই না সুখী ওই নামধাম না জানা কপোত-কপোতী! এসবই আপনার ভাবনা। কিন্তু আপনাকে দেখে ওরা কী ভাবছে?
না, বিশেষ আলাদা কিছু নয়। আপনারই মতো ভাবছে। কেবল পাল্টে গেছে দৃষ্টিকোণ। আপনাকে তুমুল সফল ও সুখী মানুষ ভেবে ওদের কারও ভেতরেও হয়তো অভিন্ন আফসোস জন্ম নিচ্ছে। আসলে মানুষমাত্রই এমন। নিজের জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলাতে গিয়ে নিজেকে সব সময় না পাওয়া অসুখী মানুষের দলে ফেলে দেয়।
ফলে ব্যক্তিগত দুঃখবোধ দীর্ঘশ্বাসে অনূদিত হয়। কেবলই মনে হয়, আমার চেয়ে বেশ আছে অন্যজন। সেই যে একটি কথা আছে না—বেড়ার ওপারের ঘাস সব সময় বেশি সবুজ মনে হয়। কবিগুরুর সেই বিখ্যাত পঙ্ক্তিও তো আমাদের ছেলেবেলা থেকে জানা—‘নদীর এ পার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস/ ও পারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।’
তাহলে সুখ কোথায়? কে সুখী? কে আসলে ভালো আছে? নিরীহ কিন্তু অতি জটিল জিজ্ঞাসা। এলআরবির প্রয়াত সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর গান থেকে এর জবাব খোঁজা যেতে পারে—‘তোমার দরজার ওপাশে একজন/ ভাবছ সে সুখী মিথ্যে আয়োজন/ নিজ ভুবনে চিরদুখী/ আসলে কেউ সুখী নয়।’
কেউ সুখী নয়—একেবারে এতটা সাধারণীকরণ করে না বলাই বোধ হয় নিরাপদ। কেউ কেউ তো সুখী নিশ্চয়ই। কারণ, সুখ ব্যাপারটা তো আপেক্ষিক। বৈষয়িকভাবে চরম দুর্দশাগ্রস্ত একজন মানুষও নিজেকে সুখী ভাবতে পারেন। তাঁর মনে হতেই পারে—না, ওপারে নয়, সর্বসুখ আমার কাছে। বেড়ার ওপারের চেয়ে এপারের ঘাসই অধিকতর সতেজ, সবুজ।
নিজেকে অসুখী আর অন্যকে সুখী ভাবার এই প্রবণতা তৈরি হয় মূলত হীনম্মন্যতা আর আত্মবিশ্বাসহীনতা থেকে। অন্যের কী আছে, সাফল্যের তথাকথিত সিঁড়ি বেয়ে কতটা ওপরে উঠে গেল কোনো চেনা পরিজন—এসব ভাবনা ছুড়ে ফেলে নিজেকে নিয়ে ইতিবাচক ভাবতে পারলেই সব হাহাকার, আফসোস, হতাশা নিমেষে দূর হয়ে যায়।
আজ ৩০ মার্চ, গ্রাস ইজ অলওয়েজ ব্রাউনার অন দ্য আদার সাইড অব দ্য ফেন্স ডে বা বেড়ার ওপারের ঘাস অধিক সবুজ দিবস। এটি নিতান্তই বিখ্যাত ইংরেজি প্রবাদের আক্ষরিক বঙ্গানুবাদ। মূলত নিজের চেয়ে অন্যকে সুখী মনে করার চিরায়ত মনুষ্যপ্রবৃত্তির নেতিবাচক দিক তুলে ধরতে চালু হয় এই দিবস। ২০১০ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে।