ইউসুফ বিন হোসাইন, চকরিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা এলাকায় গরু চুরিকে কেন্দ্র করে এক দিনমজুরকে নির্মমভাবে মারধর, বৈদ্যুতিক শক ও জোরপূর্বক সাক্ষর নিয়ে সত্তর হাজার টাকা দাবির অভিযোগ এসেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর ও ইউপি সদস্য ফখরুদ্দিনের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী দিনমজুর মনিরুল হক ডুলহাজারা ইউনিয়নের উত্তর বালুচর ৫ নং ওয়ার্ড জামাল উদ্দিনের এর ছেলে।
উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৬ সেপ্টেম্বর চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আদরকে ও ইউপি সদস্য ফখরুদ্দিন কে আসামি করে ফৌজদারি দরখাস্ত জমা দেন ভুক্তভোগী মনিরুলের স্ত্রী জোসনা আক্তার।
ইউপি সদস্য ফখরুদ্দিন ও চেয়ারম্যান আদরের মিথ্যা অভিযোগে ভিত্তিহীনভাবে সিসিটিভি’র ফুটেজটের মিথ্যা বর্ণনা দিয়ে তাঁর উপর এ পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী মনিরুলের পরিবারের।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার উপজেলার ডুলাহাজারা হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অফিসে মেম্বার ফখরুদ্দিন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে এ ঘটনা ঘটায় বলে জানা যায়।
এবিষয়ে জানতে ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফখরুদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ” গরুর চুরির ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গরুর মালিক ও জনতা তাকে শনাক্ত করতে তাঁর অফিসে নিতে আসে এবং তাকে কোনো মারধর করা হয়নি। ”

তিনি আরো বলেন, ” মনিরুল একজন চোর সে দিনমজুর নয়। তাকে আমরা গরু চুরি করে নিয়ে যেতে দেখেছি। তাকে আমরা মারিনি তার শরীরে কোন ধরনের ফাটা নেই। বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার কথা জানতে চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি । ”
ছেলের উপর এমন নির্মম নির্যাতনের বিচার চেয়ে ভুক্তভোগীর পিতা জাফর আলম সাংবাদিকদের বলেন; ” আমরা খুবই হতদরিদ্র। আমার ছেলে দিনমজুরি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। চুরি ছিনতাইয়ের সাথে সে কখনোই জড়িত ছিলো না এটা এলাকার শত শত মানুষ বলবে। আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে পরিকল্পিত এমন পাশবিক নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই। ”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন; ” মনিরুল কে কখনো আমরা চুরি ছিনতাই করতে কখনো দেখিনি। ব্যক্তিগত রোষানল থেকে চেয়ারম্যান আদর ও মেম্বার ফখরুল এমন নির্যাতন করেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান হয়ে কখনোই নিরপেক্ষ বিচার করেনি তিনি।সবসময় পক্ষপাত করে প্রতিটি বিচারে করে। চেয়ারম্যান যদি এমন হয় তাহলে আমরা তার অযোগ্য নেতৃত্বে ডুলহাজারাকে চুরি,ছিনতাই সহ নানা অপকর্ম থেকে কীভাবে মুক্তি পাবে এই এলাকার মানুষ? এ প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন শত শত মানুষ। ”
তাঁরা আরও বলেন; চেয়ারম্যান নিজেই গরুচোরের সাথে সংশ্লিষ্ট। কিছুদিন আগে তার একটি গরু চুরির নির্দেশ দেওয়ার অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিলো। নানা আলোচনা সমালোচনাও হয়েছিলো। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সে কীভাবে পার পেয়ে গেলো আমরা জানি না। এক পর্যায়ে মনিরুলের উপর নির্যাতনের সঠিক বিচার পেলে এলাকাবাসীরা মানববন্ধন করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
সূত্রে জানা গেছে, ডুলাহাজারা হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন এলাকা থেকে ২২ সেপ্টেম্বর একটি গরু চুরি হয়। গরুর সন্ধানে মালিক ও স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ডুলাহাজারা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি দোকানের সিসিটিভির ফুটেজে একজনকে গরুটি নিয়ে যেতে দেখা যায়।তবে তাকে কেওই চিনতে পারেনি। একই সময়ে ভুক্তভোগী মনিরুল কে ডুলহাজারা বাজারে সিসিটিভির ফুটেজে দেখতে পেয়ে সন্দেহজনকভাবে স্থানীয় চেয়ারম্যান আদরের অফিসে নিয়ে যায় ইউপি সদস্য ফখরুদ্দিন। নিয়ে গিয়ে মনিরুলকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে জোরপূর্বক সাক্ষর নেয়। সন্দেহজনকভাবে একজন দিনমজুরকে এমন নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চেয়ে এলাকার শতাধিক মানুষ জড়ো হয়। পরে ২৬ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী মনিরুলের স্ত্রী জোসনা আক্তার বাদি হয়ে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আদরকে ও ইউপি সদস্য ফখরুদ্দিন কে আসামি করে ফৌজদারি দরখাস্ত জমা দেন।

এবিষয়ে ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদরের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কল রিসিভ না করে মুঠোফোন বন্ধ করে দেন তিনি।