সিসিএন ডেস্ক:
কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়নের লক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কক্সবাজার সংলাপঃযুক্তির তীরে সম্ভাবনার আলো’ শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে কক্সবাজার কমিউনিটি এলাইন্স(CCAD)।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের ভূমি, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব এ.এফ. হাসান আরিফ। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনালী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ও ইতিহাসবিদ আলতাফ পারভেজ।
অনুষ্ঠানে পর্যটন উপদেষ্টা এ.এফ হাসান আরিফ বলেন, কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়নে স্থানীয় সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা খুবই প্রশংসিত উদ্যোগ। এই অনুষ্ঠান আয়োজনের ফলে কক্সবাজার পর্যটন, মৎস্য শীল্প,ভৌগোলিক অবস্থান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান, পলিসি গ্রহণ ইত্যাদি অনেক গুলো বিষয় আমাদের সামনে উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজার নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই সামনে আসে পর্যটনের বিষয়টি। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
পর্যটন শিল্পকে কীভাবে রক্ষা করা যায়,কীভাবে বিকশিত করা যায় এবিষয়ে আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই অঙ্গনে পরিকল্পিত কাজ করে বিস্তর পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটনকে কেন্দ্র করে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা যাবে না। পর্যটন অর্থ প্রকৃতি ধ্বংস নয়। স্থানীয় সংস্কৃতিকেও রক্ষা করতে হবে। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা এবং তাদের সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে।কক্সবাজারের প্রতিটি মানুষ উন্নয়নের অংশীদার হবে। ‘
তিনি আরও বলেন, নিজেরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতির আলোকে বাইরের সাহায্যও নেওয়ার দরকার হতে পারে । এজন্য কক্সবাজারের উন্নয়ন এবং সামগ্রিক বিষয়ে একটি নীতিমালা ঠিক করার কথা জানান তিনি।
রোহিঙ্গা সংকট কক্সবাজারের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ বলে মন্তব্য করে উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ‘আসিয়ানের’ সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। এবিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ইতোমধ্যে আলোচনা,পর্যালোচনা চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের সামগ্রিক উন্নয়নে কক্সবাজার রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে হবে। কক্সবাজার ডেভেলপমেন্ট অথোরিটিকে শুধু শহর কেন্দ্রিক না ভেবে পুরো জেলার উন্নতির জন্য পরিকল্পনা রাখতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘কক্সবাজার সংলাপঃ যুক্তির তীরে সম্ভাবনার আলো’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি খুবই সময়োপযোগী।
কক্সবাজার বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল হলেও এর গুরুত্ব বিশ্বব্যাপী বিস্ততৃত। পৃথিবীজুড়ে পর্যটন শীল্প এবং সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। সমুদ্র অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের যত কর্মযজ্ঞ তা কক্সবাজারকে কেন্দ্র করেই সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ভৌগোলিক দিক থেকেও কক্সবাজারের গুরুত্ব অনেক । বঙ্গোপসাগর এবং সীমান্তবর্তী এই জেলাটি পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং ভূ-প্রকৃতিগত কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এছাড়া ঐতিহাসিক কারণেও কক্সবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ক্যাপ্টেন কক্সের ইতিহাস এবং আরব বণিকদের দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে বিশ্লেষণ করলে কক্সবাজারের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়।
আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটিকে সঠিক ভাবে কাজে লাগানোর তাগিদে আজকের এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের আয়োজন হলেও জাতীয় স্বার্থে এই আয়োজন কাজে আসবে বলে আশা করছি।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়নে স্থানীয় সক্ষমতা গড়ে তোলাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত” বিষয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রতীকী বিতর্ক, যেখানে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কক্সবাজারের ছাত্র-ছাত্রীরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে অংশ নেন। এই বিতর্কে কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়ন, ভূ-রাজনীতি, নিরাপত্তা, দুর্যোগ মোকাবিলা ও সার্বিক বিষয়সমূহ উঠে আসে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কক্সবাজারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে পরিকল্পনাবিদদের মাস্টার প্ল্যান পর্যালোচনা ও মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কক্সবাজারের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ রচনার অঙ্গীকার নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়।
দিনব্যাপী এই সংলাপে অংশ নেন ঢাকাস্থ কক্সবাজারের পেশাজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা। এই সংলাপের মাধ্যমে কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়নের সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা হবে বলে আশাবাদী আয়োজকরা।
আয়োজকরা বলেন,’এই সংলাপ আমাদের স্বপ্ন দেখাবে, পরিকল্পনা দেবে এবং সম্ভাবনার পথ উন্মোচন করবে।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কক্সবাজার সংলাপ এর আহবায়ক মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম।