শুক্রবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩

কক্সবাজারে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অভিযানে শৈবাল ফুড প্রোডাক্টসকে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা

মিজানুর রহমান:

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে অনুমোদন ছাড়াই যত্রতত্র গড়ে উঠছে খাবার হোটেল, রেস্তোরাঁ ও অবৈধ ফাস্টফুড প্রোডাক্টস তৈরির কারখানা। এসব হোটেল ও রেঁস্তোরায় বাসি ও পঁচা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। এছাড়াও চাইনিজ রেস্টুরেন্টের নামে অসামাজিক কাজ ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করার অভিযোগ রয়েছে অহরহ। এ অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

রবিবার ( ৮ অক্টোবর ) বেলা ১১ টায় থেকে বিকাল পর্যন্ত কক্সবাজারের কলাতলীর সুগন্ধ্যা পয়েন্ট সংলগ্ন লেগুনা বীচের পাশে মেজবান রেস্টুরেন্টের সামনের গলিতে শৈবাল ফুড প্রোডাক্টস নামে একটি কারখানাতে অভিযান চালিয়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেন।

অভিযান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (উপ-পরিচালক) এএইচ এম আসিফ বিন ইকরাম।

অভিযানে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিমল চাকমা, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম, মনিটরিং অফিসার আসলাম উদ্দিন ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক জহুর লাল পাল উপস্থিত ছিলেন।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, কক্সবাজারের কলাতলি হোটেল মোটেল জোন ও আরো বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ফুড তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় অধিকাংশ খাদ্যের প্রোডাক্টস তৈরি করে বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে বিক্রি করে আসছে। এসব কারখানা ও রেস্টুরেন্টকে অনেকবার সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরেও তারা কর্ণপাত না করে দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে এসব অবৈধ ব্যবসা।

জানা গেছে, কলাতলি, লালদীঘিরপাড়, বাজারঘাটা, হিমছড়ি, ইনানী, বাসটার্মিনালসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় প্রায় তিন হাজারেরও বেশি ছোট-বড় খাবার হোটেল, রেস্তোরাঁ, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, ফাস্টফুড দোকানসহ বিভিন্ন খাবার দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানের খাবারের মান খুবই নিম্নমানের। ধুলো-বালির মধ্যে এবং নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাবার। এসব খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে পর্যটক ও ক্রেতাদের। যার ফলে অনেক ক্রেতাসাধারণ এসব খাবার খেয়ে পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক হোটেল-রেঁস্তোরায় খোলা ও নোংরা বাথরুম থেকে পানি এনে তা পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। খোলাস্থানের খাবারের দোকানে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর রং মেশাতে দেখা গেছে। অনেক হোটেল-রেঁস্তোরা ও চাইনিজ রেস্টুরেন্টে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। খাবারে মাছি ও পোকামাকড় এসে বসছে। চাইনিজে টেবিলে সাজিয়ে রাখা প্লেট ও গ্লাস ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাজিয়ে রাখা অবস্থায় না ধুয়ে ব্যবহার করছে ভোজন প্রিয় খদ্দেরা। খাবার মান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রেখে দীর্ঘদিন যাবৎ এসব হোটেল রেস্তোরাঁ চলে আসলেও দেখার কেউ নেই। যার ফলে বাধ্য হয়ে এসব খাবারই খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

পর্যটক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা আসার পর থেকে উখিয়া-টেকনাফ ও কক্সবাজারের কলাতলিতে অহরহ হোটেল-রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে। এতে মালিকপক্ষ অতিলাভের আশায় নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে আসছে। তারই সূত্র ধরে রবিবার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করেন। তবুও হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও অবৈধ ফুড তৈরির মালিকরা পর্যটকদের ঠকানোর আশায় দেদারসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পর্যটক ও স্থানীয়রা নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের জোর দাবি জানান।

কক্সবাজারে বেড়াতে আসা এক পর্যটক বলেন, সকালের নাস্তা খেতে কলাতলির একটি রেঁস্তোয়ায় গেলে পরিবেশন করা হয় বাসি ও গন্ধযুক্ত ডাল-সবজি দে। প্রতিবাদ করায় তাৎক্ষণিকভাবে হোটেল কর্তৃপক্ষ খাবার পরিবর্তন করে দেন। আবার ভ্যাটের ভাউচারও ধরিয়ে দেন।

হোটেল, রেস্তোরাঁ ও চাইনিজ রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন খাবার দোকানের মালিকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, খাবার মান নিশ্চিত ও পরিবেশ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দেখার দায়িত্বে রয়েছেন প্রশাসনের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের খাবার মান নিশ্চিত করাতো দূরে থাক, যে যা ইচ্ছে তাই করছে।

চট্টগ্রাম থেকে আসা আব্দুল্লাহ বলেন, সুগন্ধ্যা পয়েন্টের কয়েকটি রেস্টুরেন্টে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। কলাতলি একটি খাবার হোটেলে ভাত খেতে গেলে সিদ্ধ তেলাপোকা পাই। এর অনেকটুকু চিবিয়ে খেয়েও ফেলিও। শেষে বমি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ি। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজেই বিপদে পরার উপক্রম হয়েছিলাম। এভাবে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেলে পর্যটকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।

শহর ও কলাতলিতে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা হোটেল রেস্তোরাঁ ও চাইনিজ রেস্টুরেন্টে মান সম্মত খাবার নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সাধারণ মানুষ।

অভিযুক্ত শৈবাল ফুড প্রোডাক্টস এর মালিক জানান, তিনি ৮ বছর ধরে এ ব্যবসা করছেন। শহরের নামিদামি প্রায় ৩০ টা হোটেল-রেস্টুরেন্টে তার তৈরি করা কাস্টার্ড, মিষ্টি দই, প্রোটিন খুচরা পাইকারি সরবরাহ করছেন।

তার তৈরি করা প্রোডাক্টে বগুড়া থেকে লেভেল ছাড়া দই এনে শৈবাল ফুড এর স্টিকার মেরে বাজারজাত করে। এটাই তার সবচেয়ে অপরাধ বলে তিনি স্বীকার করেন।

অভিযান পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট এ.এইচ এম আসিফ বিন ইকরাম বলেন, হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে সব সময় অভিযোগ রয়েছে অনেকদিন ধরে। এরই সূত্র ধরে শৈবাল ফুড প্রোডাক্টস কারখানাতে অভিযান চালিয়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পর্যটন শহরে যেভাবে অবৈধ খাবার তৈরি হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকরা এসব খেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যাবে। এটা শরীরের জন্য অনেরক ক্ষতিকর। তাই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর