সিসিএন ডেস্ক:
কক্সবাজারের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে পাহাড় কাটার প্রবণতা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে। যার কারণে পাহাড় ধসে মৃত্যু থেকে শুরু করে জীববৈচিত্র্য হচ্ছে হুমকির সম্মুখীন ও বন্য প্রাণী হারাচ্ছে আবাসস্থল। সেইসাথে প্রকৃতি হয়ে পড়ছে ভারসাম্যহীন।
বর্ষা ও শীত মৌসুম আসলেই দেশে কয়েকটি অঞ্চলে পাহাড় কাটার ধুম পড়ে যায়। বিশেষ করে সেগুলোর মধ্যে কক্সবাজার অন্যতম।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পেছনে দক্ষিণ ডিককুল এলাকায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। সরকারি পাহাড়ি জায়গা সমতল করে বেশি দামে বিক্রির জন্য শ্রমিক দিয়ে দিন-রাত পাহাড় কাটছে পাহাড় খেকোরা।
গতকাল সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার পেছনে দক্ষিণ ডিককুল এলাকায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ অনেক উঁচু উঁচু পাহাড় কেটে সমতল করতে কাজ করছে ৮/১০ জন শ্রমিত। সাংবাদিকদের দেখে মাটি কাটার সরঞ্জাম রেখে পালিয়ে যায় শ্রমিকরা।
জানা গেছে, সদর উপজেলার দক্ষিণ ডিককুলের বাসিন্দা সোনামিয়া, জয়নাল, জাহাঙ্গীর, জাকারিয়ার নেতৃত্বে চলছে দিন-রাত পাহাড় ধ্বংসযজ্ঞ। এই পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে রয়েছে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী মামলা।
সোনামিয়া, জাহাঙ্গীর, জাকারিয়া তারা ৩ভাই দক্ষিণ ডিককুল এলাকার মৃত নুরুল কবিরের পুত্র ও জয়নাল তাদের বোন জামাই।
এই পাহাড় খেকোদের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে পাহাড় কেটে অনেক মাটি বিক্রি করছে বলে জানা গেছে।
পাহাড় কাটার খবর পেয়ে সোমবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানাই স্থানীয় লোকজন।
নাম জানাতে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সোনামিয়া, জয়নাল, জাহাঙ্গীর, জাকারিয়ার নেতৃত্বে চলছে দিন-রাত পাহাড় কাটা। তারা সরকারি পাহাড়ি জায়গায় বসবাস করে আসছে, সে পাহাড়ি জায়গাগুলো বেশি দামে বিক্রি জন্য শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কাটছে। তারা পাহাড় কেটে রাস্তায় মাটি ফেলার কারণে বৃষ্টির ঢলে অনেকের বাড়িতে মাটি ঢুকে যাচ্ছে। বর্ষায় মাটি এসে পানি চলাচলের নালা ভরে যায় ফলে পানি চলাচল করতে না পেরে বর্ষাকালে রাস্তায় পানি জমে থাকে। যা নিয়ে প্রতিদিনই জগড়া-বিবাদ লেগে থাকে। কেউ বাধা প্রদান করলে অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ করে।
স্থানীয় লোকজন আরও জানান, তারা এভাবে পাহাড় ধ্বংস করতে থাকলে যেকোনো সময় পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে। আবার পাহাড়ের উপরে বসবাসরত পরিবারগুলোও বেশি ঝুঁকিপূর্ণতে রয়েছে।
অতিশীঘ্রই যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযান পরিচালনা করে এই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় কাটা বন্ধ না করে তাহলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
পাহাড়ের উপরে বসবাসরত এক স্থানীয় জানান, “তারা করো কথা না মেনে নিচে থেকে পাহাড়ের পাড় কেটে ফেলছে। আমরা এখন খুবই ঝুঁকিতে রয়েছি, যেকোনো সময় আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়ে যেতে পারে। আর আমার বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে পাহাড় থেকে পড়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।”
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এখন পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তরের নীরব ভূমিকার কারণে পাহাড় কাটাসহ পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তিনি পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেন কক্সবাজারের পরিবেশ সুরক্ষায়।”
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিডি নুরুল আমিন জানান, “পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পাহাড় কাটার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে।”
যাচাই-বাছাই করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।