সাইদুল ফরহাদ
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক নারীকে পেটানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে টিশার্ট পরা এক পুরুষ হাতে একটি কাঠ নিয়ে সাদা টপস ও মুখে মাক্স পর নারীকে ওঠবস করাচ্ছে। এবংএক পর্যায়ে নারীকে পেটাচ্ছেন। সেখানে তিনি এই নারীকে যৌনকর্মী হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
ভিডিওতে দেখা যায় রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে একজন নারী একদল লোকের ভিড়ের মধ্যে কান ধরে উঠবোস করছেন। ভিডিওটিতে শুধু একজন ব্যক্তিকে দেখা যায় হাতে কাঠের লাঠি দিয়ে উঠবোস করা নারীকে একাধিকবার আঘাত করছেন।পাশে থাকা লোকজন তাকে মারধরের জন্য অনুরোধ করেন।
ভিডিওতে মারধর করা যুবকটির নাম ফারুকুল ইসলাম। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকায়।
এই ঘটনার পরে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। নিন্দা জানিয়ে কক্সবাজারের সচেতন মহল বলছে, একজন মানুষ যত অপরাধ করুক না কেন তার জন্য আইন আছে।তবে একজন নারীকে এভাবেই পেটানোটা ঠিক হয়নি।
জাহাঙ্গীর আলম সামস নামে একজন সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, কক্সবাজারে কেউ নামাজ পড়তে আসে না।একজন নারীকে এভাবেই পেটানোটা ঠিক হয়নি।
আরেক যুবক রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, এই যুবকে এই ক্ষমতা কে দিয়েছে। এই বীচ কারো বাপের না।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার হচ্ছে পর্যটন শহর এখানে মানুষ আসে সমুদ্র উপভোগ করার জন্য বিনোদনের উদ্দেশ্যে আসে।
এবং দেশি বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে যেমন কক্সবাজার থেকে প্রথম ট্যুরিস্ট পুলিশের যাত্রা শুরু হয়েছিল তেমনি সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে পর্যটন আর পর্যটকদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
কিন্তু ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একদল যুবক সমুদ্র সৈকতে নারী পর্যটকদের উপর যেভাবে হামলা মারধর করে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে তা দুঃখজনক।
এবং সেটি শতভাগ পর্যটন শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
এমনিতেই কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের অবস্থা বিগত কয়েক বছর ধরে খারাপ যাচ্ছে তারমধ্যে নারীদের উপর এমন আচরন প্রচার হলে নিরাপত্তার অভাবে পর্যটক কক্সবাজারের পরবর্তীতে ভিন্ন কোন পর্যটন স্পট খুঁজে নিবে এতে কক্সবাজারের বিনিয়োগ কমে যাবে।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, মারধরের শিকার নারী তিনি কক্সবাজার কটেজ জোনে থাকেন। এবং পতিতা বৃত্তির সাথে জড়িত। রাতে কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিভিন্ন ফাঁদে পেলে টাকা আদায় করে থাকে।
কক্সবাজার লাইট হাউসের আসিফ( ছদ্মনাম) জানান, বৃষ্টি নামে এক নারী এই সিন্ডিকেট এর প্রধান।বেড়াতে আসা পর্যটকদের টার্গেট করে সুন্দরী নারী দিয়ে ফাঁদে পেলে টাকা আদায় করে। তাদের গ্রুপের ৪০-৫০জন সদস্য আছে।মূলত রাত হলে সুগন্ধা পয়েন্টে তারা বিচরণ করেন।
টুরিস্ট পুলিশের তথ্য বলছে,চলতি বছরে পর্যটক হয়রানি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, প্রতারণাসহ অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে, শতাধিক আটক করেছেন।
এসব কাজে ঢাকার বাড়ী-২ কটেজ, আমীর ড্রীম কটেজ, ঢাকার বাড়ি-১ কটেজসহ কযেকটি কটেজ জড়িত বলে জানান এই সংস্থা।
তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পর্যটক সেলের ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করেন, ভিডিওটা সম্প্রতি সময়ের নয়।এটি অনেক আগের।
তিনি জানান বিষয়টি নজরে আসলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করলে অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম জানান, এই ঘটনাটি আমরা জানতে পেরেছি।এই ঘটনা তদন্ত চলছে।