বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৭, ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গুজব, সতর্ক থাকার পরামর্শ

সিসিএন অনলাইন ডেস্কঃ

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গুজবের ডালপালা মেলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এসব গুজব ছড়িয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহতের গুজব ছড়ানো হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীও হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বলে ফেসবুকের বিভিন্ন প্লাটফর্মে গুজব ছড়ানো হয়।

তবে রাত সাড়ে ৯টায় শহীদুল্লাহ আবাসিক হলের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানানো হয়।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া গুজবপোস্টে দাবি করা হয়, ইব্রাহিম নিরব নামে এক শিক্ষার্থী গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। তবে পরে এক ফেসবুক পোস্টে নিরবও জানান তিনি বেঁচে আছেন। তবে গুরুতর আহত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে, এমন গুজবের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, ফাঁকা গুলি এবং ককটেল হামলার আওয়াজ আমরা পেয়েছি। তবে কেউ আহত বা নিহত হয়েছেন এমন কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। দেশের কোথাও থেকে এমন তথ্য আমরা পাইনি।

ঢাবিতে সংঘর্ষে প্রাণহানির নামে গুজব ছড়ানোর পর আহত শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে জানান তিনি বেঁচে আছেন। ছবি সংগৃহীত

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন আবাসিক হলে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এ সময় তাদের সঙ্গে বিজয় একাত্তর হলের সামনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে তা পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ছাত্রলীগের ধাওয়ায় ক্যাম্পাস ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এবং দোয়েল চত্বর এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে শহীদুল্লাহ আবাসিক হল, দোয়ের চত্বর এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় আবারও সংঘর্ষ ও ধওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

রাতের ব্রিফিংয়ে আন্দোলনকারীরা জানান, ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় আমাদের ভাই-বোন ও বন্ধুরা আহত হয়েছেন। দুইশ’র বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন আচরণের কারণে আমাদের এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে।

গণমাধ্যমের নামে ছড়ানো হচ্ছে ভুয়া তথ্য

এদিকে যেকোনো আন্দোলন ঘিরে ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভিন্ন সময় একটি মহল ফয়দা নেয়ার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নামে ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহারেরও নজির রয়েছে। এবারের কোটা আন্দোলন ঘিরেও এমন তৎপরতা দেখা গেছে।

ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় চ্যানেল সময় টিভির সোর্স উল্লেখ করেও গুজব ছড়ানো হয়েছে। এমনই এক গুজবে ঢাবির রসায়ন বিভাগের এক ছাত্র প্রাণ হারিয়েছেন বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যদিও এমন তথ্য দিয়ে সময় টিভি চ্যানেলে বা এর ওয়েবসাইটে কোনো সংবাদ প্রচার হয়নি। দেশের অন্যান্য গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার করেও এমন তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ মিলেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন বলে গুজব ছড়ানো হয়। ছবি সংগৃহীত

ঢাবিতে দিনভর যা হলো

দুপুর ২টার পর থেকে ঢাবি ক্যাম্পাসে দুপক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সময় সংবাদের প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন, শুরুতে বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে অংশ নিলেও পরে অন্যান্য হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও যোগ দেন। বিজয় একাত্তর হলের সংঘর্ষের রেশ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের হটিয়ে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেন।

মিছিল নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে শোডাউন করেন। কোটা আন্দোলনকারীরা যাতে পলাশী বা নীলক্ষেত থেকে আবারও ক্যাম্পাসে আসতে না পারেন, সে জন্য ফুলার রোডে অবস্থান নেন।

বিকেল ৫টার পর ঢাবির দোয়েল চত্বর এলাকায় ফের আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শহীদুল্লাহ হলের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়া এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

আবাসিক হলের ভেতর থেকেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়। এরমধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। তবে এ সময় পুলিশের কোনো উপস্থিতি ঘটনাস্থলে ছিল না। যদিও প্রথম দফা সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর ক্যাম্পাসে পুলিশ সদস্যদের ঢুকতে দেখা গিয়েছিল। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে শহীদুল্লাহ হলের সামনে পুলিশ অবস্থান নিয়ে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে দুপুর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ বন্ধ হয়।

২০১৮-এর আন্দোলন ঘিরেও ছড়ানো হয়েছিল গুজব

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে অজ্ঞাত সংখ্যক লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।

সে সময় পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, মৃত্যু ও রগ কাটার মতো মিথ্যা তথ্য প্রচার করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সহিংস করে তোলা হয়েছিল। ফেসবুকের ২০০টির মতো অ্যাকাউন্ট থেকে এমন তথ্য ছড়ানো হয়। এছাড়া টুইটারে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং কিছু অনলাইন পোর্টালের বিরুদ্ধেও তখন গুজব ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নামে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ছবি সংগৃহীত

আন্দোলন ঘিরে কেন এমন গুজব ছড়ানো হয়

আন্দোলন ঘিরে গুজব ছড়িয়ে একটি মহল নিছক ফায়দা লোটার চেষ্টা চালায় বলে মনে করেন ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তার মতে, এমন গুজব পরিস্থিতিতে সবাইকে সচেতন থাকা দরকার। নয়তো যেকোনো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, গুজব রটানোর বিষয়টি আসলে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কারণ গুজব নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কিন্তু সেটি করা যায় না। আর এই সুযোগে একটি মহল গুজব ছড়িয়ে ফায়দা নিয়ে নেয়। এসব ক্ষেত্রে আন্দোলনে সম্পৃক্তদের আরও সচেতনভাবে কাজ করতে হবে।

কোটা আন্দোলন নিয়ে ছড়ানো গুজবে শিক্ষার্থীরা কান দিলে তাদের দাবি অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস হতো সনা। গুজবে কান দিলে তাদের আন্দোলন সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে বলে মনে করেন ঢাবির সাবেক এই উপাচার্য।

আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর

error: Content is protected !!