চকরিয়া প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে পৌর ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাছের ঘেরের শ্রমিকের ছোড়া গরম পানিতে দুই কিশোরের শরীর ঝলসে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিশোরদের ঝলসানো শরীরের কয়েকটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠে। শনিবার ভোর ছয়টার দিকে উপজেলার রামপুরের ৪ নম্বর হোল্ডারে অবস্থিত কাউন্সিলর আব্দুস সালামের মাছের ঘেরে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার(২২ মে) চকরিয়া থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হলে থানা পুলিশ এটি আমলে নিয়ে বিকাল ৩:০০ টায় ওই কাউন্সিলর কে আটক করে।
আহত কিশোর উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ঈদমনি লালব্রিজ এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে মনির উদ্দিন (১৪) ও একই এলাকার মোহাম্মদ ইউছুফের ছেলে মোহাম্মদ সিফাত (১৬) চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
রামপুরে মাছের ঘেরে কাজ করে এমন চারজন শ্রমিক বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে দুটি ইঞ্চিন চালিত নৌকায় করে চকরিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুস সালামের মাছের ঘেরে চোঁয়ারফাঁড়ি ঘাট থেকে মাছ ধরার শ্রমিক নিয়ে যায় কিশোর মনির উদ্দিন ও মো. সিফাত। শ্রমিকদের ফের চোঁয়ারফাঁড়ি ঘাটে আনতে হবে এজন্য কাউন্সিলরের মাছের ঘেরের পাশে নৌকা নোঙর করে ঘুমিয়ে পড়ে ওই দুই কিশোর। নিজের শার্টের পকেট থেকে ১৮ হাজার ৬০০ টাকা চুরি করেছে এমন অজুহাত তুলে শনিবার সকাল ছয়টার দিকে কিশোরদের মাছের ঘেরের টঙ ঘরে নিয়ে যান কাউন্সিলর আব্দুস সালাম। এসময় আব্দুস সালামের নেতৃত্বে মো. ছাদেক ও মো. নাছির উদ্দিন নামের দুই ব্যক্তি ওই কিশোরদের ব্যাপক মারধর করে টাকা চুরির স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে কিশোরেরা টাকা চুরির কথা স্বীকার না করায় আব্দুস সালাম তাঁর শ্রমিক ছাদেককে কিশোরদের শরীরে গরম পানি ছুঁড়ে শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দেন। এসময় ছাদেক গরম পানি ছুঁড়ে মারলে দুই কিশোরের শরীর ঝলসে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনেরা খবর পেয়ে ওই দুই কিশোরকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এঘটনায় কিশোর মনির উদ্দিনের দাদা আব্দুল কাদের কাউন্সিলর আব্দুস সালাম তাঁর মাছের ঘেরের শ্রমিক মো. ছাদেক ও নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের একটি নৌকা আছে। সেটি কিশোর সিফাত চালায়। আরেকটি নৌকার মাঝি লাল মিয়ার সহকারি কিশোর মনির উদ্দিন। শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে রির্জাভ ভাড়া নিয়ে নৌকা দুটি রামপুরে অবস্থিত কাউন্সিলর আব্দুস সালামের মাছের ঘেরে যায়। সেখানে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে দুই কিশোরকে মারধর শেষে গরম পানি ঢেলে শরীর ঝলসে দেয়া হয়। এঘটনায় গত শনিবার রাতে থানায় এজাহার দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি।’
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার বলেন, ‘এঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি এজাহার পেয়েছি। মামলা রুজু হয়েছে। মামলা হওয়ার এক ঘন্টার মধ্যে ওই কাউন্সিলর কে আটক করা হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে চকরিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোরদের ভয়ভীতি দেখানোর পর কিশোর মনির উদ্দিন টাকা চুরির কথা স্বীকার করেছে। এরপর আমি মাছের ঘের থেকে চলে আসি এবং শ্রমিকদের নির্দেশ দিয়ে আসি, যেন কোনো প্রকার মারধর না করা হয়। আমি ঘের থেকে চলে আসার আধাঘণ্টা পর শুনি, কিশোর দুইজনের শরীর গরম পানিতে ঝলসে গেছে।’ কে গরম পানি ছুঁড়ে মেরেছে জানতে চাইলে কাউন্সিলর আব্দুস সালাম বলেন, সবাই বলতেছে আমার ঘেরের শ্রমিক ছাদেক গরম পানি ছুঁড়েছে। অহেতুক তাকে জড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেন আব্দুস সালাম।