সিসিএন অনলাইন ডেস্ক:
উদ্বোধনের পর কক্সবাজারে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয় গত বছরের ১ ডিসেম্বর। তবে পথিমধ্যে স্টপেজ না রাখায় নানামুখী সমালোচনা ও দাবির মুখে সর্বশেষ ঈদুল ফিতরে রেলওয়ে একটি স্পেশাল ট্রেন চালু করে। তবে কথা ছিল স্থানীয়দের জন্য দেয়া হবে আন্তঃনগর ট্রেন।
লোকবল ও ইঞ্জিন সংকটের কারণে নতুন ট্রেনটি চালু করতে না পারায় এবার বিশেষায়িত অস্থায়ী ট্রেনটিকেই স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্পেশাল ট্রেনটিকে কোরবানি ঈদ পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে পরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটের শিডিউলে স্থায়ীভাবে যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে, উদ্বোধনের পর ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়। চট্টগ্রামে ইঞ্জিন পরিবর্তনের জন্য কেবল ২০ মিনিটের বিরতি দেয়া হয়, আর আসন বরাদ্দ ১১৫টি। ঢাকা থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সড়কপথের যাত্রাপথ সময়সাপেক্ষ এবং কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ট্রেনের চাহিদা বেশি। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা এ সেবা থেকে বঞ্চিত। সেই সঙ্গে কক্সবাজার পার্শ্ববর্তী জেলা হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকেও দু-একটি ট্রেনের চাহিদা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে নতুন ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছে স্থানীয়রা। কিন্তু লোকবল সংকট ও ইঞ্জিনের অপ্রতুলতায় সেটি বাস্তবায়ন করতে পারছে না রেলওয়ে।
চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রাবিরতির দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজার রুটের ট্রেনে ঢিল ছোড়ার প্রবণতা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা। সে কারণে চলমান স্পেশাল ট্রেনে কোচের সংখ্যা বাড়িয়ে আগামী কোরবানির ঈদ পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব করেছে পূর্বাঞ্চল রেলের পরিবহন বিভাগ। কোরবানির ঈদের পর ট্রেনটিকে এক জোড়ার পরিবর্তে একই রেক দিয়ে দিনে দুই জোড়া ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা তাদের।
সম্প্রতি কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটির সময় তৃতীয় দফায় বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠায় রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ। মূলত ঈদ-পরবর্তী সময়ে ট্রেনটির চাহিদা আরো বেড়ে যাওয়ায় সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। শুরুতে গত ৮ এপ্রিল থেকে ঈদের দিন ছাড়া ১৪ এপ্রিল চলাচলের ঘোষণা থাকলেও সেটিকে বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। পরে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২০ মে পর্যন্ত স্পেশাল ট্রেনটির সময় বাড়ানো হয়।
রেলের বাণিজ্যিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যাত্রা শুরুর পর প্রথম ১৬ দিনে (২৩ এপ্রিল পর্যন্ত) কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের মোট আয় হয়েছিল ২৬ লাখ ২ হাজার ৪৪৫ টাকা। তবে ঈদের পর ট্রেনটির শিডিউল বাড়ানো হলে প্রতিদিনের আয় আরো বেড়ে যায়। সর্বশেষ ২৬ দিনে ট্রেনটি প্রায় ৫৩ লাখ টাকা আয় করেছে। বাড়তি চাহিদার কারণে এ ট্রেনে প্রতিদিনই দুই-তিনটি অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করতে হচ্ছে রেলওয়েকে। এখন ১৮/৩৬ কোচের রেক দিয়ে ট্রেনটি পরিচালনা করা হলে তা আগামীতে স্বল্পদূরত্বে রেলের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয়ের ট্রেনে পরিণত হবে বলে আশা করছে বাণিজ্যিক বিভাগ।
জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঢাকার মতো চট্টগ্রাম থেকেও কক্সবাজারে যাত্রী চাহিদা রয়েছে। প্রথমবারের মতো রেলপথ তৈরি হওয়ায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতেও রেলওয়ে সচেষ্ট। এজন্য ঈদের সময় চালু হওয়া স্পেশাল ট্রেনকে কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে চালানো হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায় থেকে ট্রেনটির সময়সূচি বাড়াতে আবারো প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কোরবানির ঈদ পর্যন্ত কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের সময় বাড়ানোর অনুমোদন পাওয়া গেলে সেটিকে স্থায়ী রূপ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’
জানা গেছে, বর্তমানে ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে কক্সবাজার স্টেশন পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে রাত ১০টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছায়। পথিমধ্যে ষোলশহর স্টেশন, জান আলী হাট স্টেশন, পটিয়া, দোহাজারী, ডুলাহাজরা, সাতকানিয়া, চকরিয়া ও রামু স্টেশনে কয়েক মিনিট করে যাত্রাবিরতি দেয়।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার রেলপথে স্পেশাল ট্রেনের বর্তমান সর্বনিম্ন ভাড়া শোভন শ্রেণীতে ১৮৫ টাকা, শোভন চেয়ার ২২৫, প্রথম শ্রেণীর চেয়ার ও প্রথম শ্রেণীর সিটের ভাড়া ৩৪০ টাকা করে। চাহিদা থাকলেও ট্রেনটিতে কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচ সংযোজন করেনি রেলওয়ে। তবে স্থায়ীভাবে চলাচল শুরু করলে স্নিগ্ধা শ্রেণীর আসনও যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।