সিসিএন অনলাইন ডেস্ক-
বিদায়ের ঘণ্টা যেন বাজি বাজি করছিল! ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছিলেন তিনি। তার সুস্থতার জন্য ঢাকা থেকে কলকাতার গানপ্রেমীদের মন ছিল প্রার্থনায় মশগুল। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত অমরত্বের দিকেই পা বাড়ালেন মহীনের শেষ ঘোড়া। এর মাধ্যমে বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো।
রবিবার (২৫ জুন) বেলা ১১টার দিকে কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তাপস দাস। যিনি সবার কাছে বাপীদা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এতদিন ব্যান্ডটির শেষ সদস্য হিসেবে পৃথিবীর বুকে নিশ্বাস নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু রবিবার সেই যক্ষের ধনটুকুও বাংলা ব্যান্ডের ভাণ্ডার থেকে বিদায় নিলো।
মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন কলকাতার এ সময়ের ব্যান্ড তারকা রূপম ইসলাম। সোশ্যাল হ্যান্ডেলে বাপীদার কয়েকটি ছবি পোস্ট করে তিনি বলেছেন, ‘এরকম কত বাঙ্ময় মুহূর্তই রয়ে গেল শুধু। সচল হয়েই থেকে গেল গানজীবনের অনন্ত পথ চলা। থেমে গেলো বললে ভুল হবে, মারাত্মক ভুল। বাপীদা— সশরীরে তুমি আর নেই; কিন্তু সর্বত্র এভাবেই তুমি থাকবে। লাল সেলাম। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।’
তাপস দাসের চিকিৎসা তহবিলের জন্য কলকাতায় একাধিক কনসার্ট হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যান্ড কমিউনিটিও একটি উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ১৪ জুলাই ‘ভালোবাসি জ্যোৎস্নায়’ শীর্ষক সেই কনসার্ট ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে কনসার্টের টিকিটও বিক্রি শুরু হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই এলো শিল্পীর প্রয়াণের খবর।
তাহলে বাপীদার জন্য সেই কনসার্ট কি হবে? হলে সেটার অর্থ কোন খাতে ব্যয় হবে? বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় কনসার্টের অন্যতম আয়োজক গৌতম কে শুভর সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘কনসার্ট নির্ধারিত তারিখেই হবে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, টাকাগুলো বাপীদার চিকিৎসায় ব্যয় হবে না। তবে আমরা সমস্ত টাকা তার স্ত্রী সুতপা দাসের কাছে হস্তান্তর করবো।’

১৯৭৯ সালে রবীন্দ্রসদনে কনসার্টে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি
বলা দরকার, ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ হলো কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম বাংলা রক ব্যান্ড। ১৯৭৪ সালে গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এটি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন অন্য সদস্যরা ছিলেন তপেস বন্দ্যোপাধ্যায়, রঞ্জন ঘোষাল, তাপস দাস, আব্রাহাম মজুমদার, বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায় ও প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। প্রথম দিকে ব্যান্ডটির নাম ছিল ‘তীরন্দাজ’। পরে এর নাম হয় ‘গৌতম চ্যাটার্জি বিএসসি অ্যান্ড সম্প্রদায়’। এরপর রঞ্জন ঘোষালের প্রস্তাবে ব্যান্ডটির নাম ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ রাখা হয়। এই নাম এসেছে কবি জীবনানন্দ দাশের ‘সাতটি তারার তিমির’ কাব্যগ্রন্থের ‘ঘোড়া’ শিরোনামের কবিতার দ্বিতীয় পঙক্তি থেকে।
বলা বাহুল্য, ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ ব্যান্ডটি সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ছিল। ব্যান্ডটি এমন সব গান সৃষ্টি করে গেছে, যেগুলোর কথা-সুরের ওজন কিংবা মাধুর্য আজ অব্দি ছাড়িয়ে যেতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের কোনও ব্যান্ড। কালজয়ী এই ব্যান্ডের বেশিরভাগ গান বাংলাদেশেও জনপ্রিয়।