প্রেস বিজ্ঞপ্তি :
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটক নগরী কক্সবাজার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জন্য সাগরকন্যা নামে খ্যাত। কিন্তু আলোর নিচে অন্ধকারের মত দেশের অন্যতম এ প্রাচীন শহর নানা সমস্যায় জর্জরিত।
১৮৬৯ সালে পৌরসভা হিসেবে কক্সবাজার আত্মপ্রকাশ করলেও এ শহরে ন্যূনতম পৌরসেবা থেকে বেশিরভাগ মানুষ বঞ্চিত। বিশেষত দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষেরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ পানি, নিরাপদ স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রচারণার মত সাধারণ ও অত্যাবশ্যকীয় সেবা পায় না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যাব ব্যুরোর ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী কক্সবাজারের ১২টি ওয়ার্ডে ১,৯৬,৩৭৮ জন বাসিন্দা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ৪৩০টি হোটেল, ১১০টি রেস্তোরাঁ ও সাতটি রিসোর্ট। প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ মানুষ কক্সবাজারে ভ্রমণ করতে আসে। এখানে শুষ্ক মৌসুমে মাথাপিছু দৈনিক বর্জ্য উৎপাদিত হয় ০.৩৩ কেজি এবং বর্ষার সময়ে ০.৪৬ কেজি। কিন্তু সারা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নত মানের আধুনিক সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন না থাকায় নগরবাসীর ময়লা নিয়ে নাভিশ্বাস উঠে গেছে।

এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে উদ্যোগ নিয়েছে দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র। ইউনিসেফের সহযোগিতায় ডিএসকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করার জন্য ওয়ার্ড নং ১ কে পাইলটিং হিসেবে বেছে নিয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতি বাজার ও শুটকিপল্লীর নিম্ন আয়ের উপকূলীয় এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় সেখানকার মানুষেরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। এছাড়া পচনশীল ও প্লাস্টিক এবং অন্যান্য অপচনশীল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার অভাবের কারণে নদীখাল দূষণ, সমুদ্র দূষণও হচ্ছে।
এই সমস্ত বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইউনিসেফ এর সহায়তায় দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র নগরীর ১ নং ওয়ার্ডে নির্মান করেছে একটি সলিড ওয়েস্ট সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন।
৩০ জুলাই বিকাল চারটায় উদ্বোধন ও হস্তান্তর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে গেল এই সলিড ওয়েস্ট ট্রান্সফার স্টেশনের। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র কক্সবাজার পৌরসভাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপনাটি হস্তান্তর করে।

এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিল কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর। কিন্ত অনিবার্য কারণবশত তিনি উপস্থিত থাকতে না পারায় প্রধান অতিথি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম তারিকুল আলম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা, কক্সবাজার ইউনিসেফের ওয়াস স্পেশালিস্ট জনাব জাহিদুল মামুন, এবং দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষে যুগ্ম পরিচালক জনাব আলমগীর রহমান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ত্ব করেন সংরক্ষিত আসন ওয়ার্ড নং ১, ২, ৩ এর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেনা আক্তার। এছাড়া জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা, বিভিন্ন ওয়াস পার্টনার সংস্থা ও ডি এস কে আরবান ওয়াশের সকল কর্মকর্তাবৃন্দ, ১নং ওয়ার্ডের ওয়াস কমিটি, বর্জ্য উদ্যোক্তারা, পরিচ্ছন্নতা কর্মী বাহিনী এবং ১নং ওয়ার্ডবাসী উপস্থিত ছিলেন।
পৌরসভার আওতায় ও অনুমোদনক্রমে ডিএসকে আরবান ওয়াস, কক্সবাজার প্রকল্প থেকে প্রাথমিকভাবে দুইজন বর্জ্য উদ্যোক্তা তৈরি করে যাদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এই ট্রান্সফার স্টেশন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীর সুবিধাভোগীদের জন্য প্রদেয় সেবামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আবাসিক শ্রেণীর ৭,১৩৫টি খানার জন্য মূল্য নির্ধারণ হয়েছে খানাপ্রতি মাসিক ৩০ টাকা। বাজার এলাকায় বড় দোকানের জন্য ১৫০ টাকা, মাঝারি দোকানের জন্য ১০০ টাকা ও ছোট দোকানের জন্য ৮০ টাকা সেবামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া হোটেল/প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫০ টাকা ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকারী ও ঘাটসমূহের জন্য ২০০ টাকা করে ধার্য করা হয়েছে।
যেভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হবে:
প্রথমে বিভিন্ন খানায় শ্রেণীকৃত বর্জ্য নির্দিষ্ট বিনে জমা হবে। উদ্যোক্তা এরকম ২১০ জোড়া কম্যুনাল বিন থেকে অথবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করবে। উদ্যোক্তার ভ্যানে করে সেই বর্জ্য সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে নিয়ে আসা হবে। এখান থেকে পৌরসভার গাড়ি সেই বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাবে। এরপর পচনশীল বর্জ্য চলে যাবে ডাম্পিং স্টেশনে এবং নবায়নযোগ্য বর্জ্য বিভিন্ন কারখানায় বিক্রি করা হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এই কাজে ডিএসকে আরবান ওয়াশ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মধ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছে। এই পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১ নং ওয়ার্ডের ৭৩টি কম্যুনিটির মধ্যে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও জনগনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করেছে ডিএসকে। কম্যুনিটির অবস্থা বিশ্লেষণ করে একটি ওয়াশ ইনভেন্টরি প্রস্তুত করা হয়েছে।
দল গঠন করে ডিএসকের কর্মীরা সিবিও সদস্যদের সাথে নিয়ে বাড়ি বারি গিয়ে বিভিন্ন ধরণের বর্জ্য আলাদা আলাদা করে সঠিকভাবে রাখার বিষয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। ৪৫০টি সচেতনতামূলক মিটিং (হাইজিন সেশন) ও ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ১ নং ওয়ার্ডের ৪৮ হাজার নিম্ন আয়ের নগরবাসীর (২২,৬০০ পুরুষ, ২২,০০০ নারী, ৪৮০ জন প্রতিবন্ধী) মাঝে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা হয়েছে।