মিজানুর রহমান:
অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরির দায়ে কক্সবাজারের স্বনামধন্য দুইটি রেস্তোরাঁকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে হান্ডি রেস্তোরাঁকে ১ লাখ টাকা ও প্রাসাদ প্যারাডাইসকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে ১২ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত কক্সবাজারের লাবণী ও সুগন্ধ্যা পয়েন্ট সংলগ্ন হোটেল প্রসাদ প্র্যারাডাইস ও হান্ডি রেস্তোরা নামে দুটি খাবার হোটেলে অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
এতে স্বনামধন্য প্রসাদ প্র্যারাডাইস খাবার হোটেলে রান্না করা খাবার ফ্রিজিনে সংরক্ষণ করে রাখার কারণে ২ লক্ষ টাকা ও হান্ডি রেস্তোরায় পচা মাছ রান্না করে ফ্রিজিনে রাখার কারণে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক এএইচএম আসিফ বিন ইকরাম। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো: নাজমুল ইসলাম ও র্যাবের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, কক্সবাজারের কলাতলী হোটেল মোটেল জোন ও আরো বিভিন্ন এলাকায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি করে থাকেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, কলাতলি, লালদীঘিরপাড়, বাজারঘাটা, হিমছড়ি, ইনানী, বাসটার্মিনালসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় প্রায় তিন হাজারেরও বেশি ছোট-বড় খাবার হোটেল, রেঁস্তোরা, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, ফাস্টফুড দোকানসহ বিভিন্ন খাবার দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানের খাবারের মান খুবই নিম্নমানের। ধুলো-বালির মধ্যে এবং নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাবার। এসব খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে পর্যটক ও ক্রেতাদের। যার ফলে অনেক ক্রেতাসাধারণ এসব খাবার খেয়ে পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক হোটেল-রেঁস্তোরায় খোলা ও নোংরা বাথরুম থেকে পানি এনে তা পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। খোলাস্থানের খাবারের দোকানে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর রং মেশাতে দেখা গেছে। অনেক হোটেল-রেঁস্তোরা ও চাইনিজ রেস্টুরেন্টে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। খাবারে মাছি ও পোকা-মাকড় এসে বসছে। চাইনিজে টেবিলে সাজিয়ে রাখা প্লেট ও গ্লাস ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাজিয়ে রাখা অবস্থায় না ধুয়ে ব্যবহার করছে ভোজন প্রিয় খদ্দেরা। খাবার মান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রেখে দীর্ঘদিন যাবৎ এসব হোটেল রেঁস্তোরা চলে আসলেও দেখার কেউ নেই। যার ফলে বাধ্য হয়ে এসব খাবারই খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

বাংলাদেশ রেঁস্তোরা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নইমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যুগ উপযোগ নিরাপদ খাদ্য আইন করা হয়েছে এতে সর্বনিম্ন ২ লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ১০-১৫ বছর পর্যন্ত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বিদান আছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মোবাইল কোর্ডকে স্বাগত জানাই, রান্নাঘরে ফ্রিজিংএ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে খাবার রাখায় দুই খাবার হোটেলে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে।
অভিযান পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট এ.এইচ এম আসিফ বিন ইকরাম বলেন, হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে সব সময় অভিযোগ রয়েছে অনেকদিন ধরে। প্রথম দিনে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ও দ্বিতীয় দিনে অভিযানে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে রান্নাঘরে ফ্রিজিংএ খাবার রাখার কারণে হান্ডি রেস্তোরাঁকে ১ লাখ ও হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসকে ২ লাখ মোট ৩ লক্ষ জরিমানা করা হয়েছে। পর্যটন শহরে যেভাবে অবৈধ খাবার তৈরি হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকরা এসব খেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যাবে। এটা শরীরের জন্য অনেরক ক্ষতিকর। তাই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এর আগে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে অনুমোদন ছাড়াই যত্র-তত্র গড়ে উঠছে খাবার হোটেল, রেঁস্তোরা ও অবৈধ ফাস্টফুট প্রোডাক্টস তৈরির কারখানা ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।