মিজানুর রহমান:
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে টানা তিন দিনের ছুটি শেষ দিন আজ শনিবার অন্যদিকে সপ্তাহব্যাপি পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল। তাই কক্সবাজারে ভ্রমণ পিপাসুদের উপচেপড়া ভিড় জমেছে পর্যটকদের। এতে সমুদ্র সৈকতসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই। ইতিমধ্যেই পর্যটকদের আগমনে প্রায় ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলো বুকিং হয়ে গিয়েছে। শহরের পর্যটন জোনের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্টের তিন কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত এলাকা রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
পর্যটকদের এই ঢল শনিবার পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চলমান ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিচ কার্নিভালে আরো কিছু পর্যটক থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে বিশ্ব পর্যটন দিবস ও বিচ কার্নিভাল উপলক্ষে আয়োজক জেলা প্রশাসন ও হোটেল মালিকদের পক্ষ থেকে যে ছাড়ের কথা বলা হয়েছিল তা কিছুতেই বাস্তবায়ন নেই বলে অভিযোগ করছেন পর্যটকরা।
ঢাকা থেকে স্বপরিবারে পর্যটক আসা তারা বলেন,পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল উপলক্ষে হোটেল মোটেল ও রেস্তোরাঁতে ৬০%-১৫% ছাড় দেয়া হয়েছিল তা আমরা পাইনি। এসব লোভ দেখানো ছাড় বলে মন্তব্য করেন এই পর্যটকরা।
তবে প্রশাসনের দাবি ছাড়ের বিষয়টি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে মাঠে আছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট৷
জানা গেছে, গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ছিল বিশ্ব পর্যটন দিবস। দিবসটি সামনে রেখে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যাল করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শনিবার ( ৩০ সেপ্টেম্বর ) সমুদ্র সৈকতের তিন কিলোমিটার এলাকায় সাজ সাজ রব। লাবণী পয়েন্টকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এখানে সৈকতে যাওয়ার ফটকে মেলা ও বিচ কার্নিভাল উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। মঞ্চের সামনে সড়কের দুই পাশে সারি সারি স্টল। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলায় ঘোরাঘুরি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া পর্যটকরা কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে যাচ্ছেন দরিয়া নগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের দিকে। কেউ কেউ ছুটছেন মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধপল্লী, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ও নিভৃতে নিসর্গসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। এছাড়া পরীক্ষামূলক টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে এমভি বারো আউলিয়া নামে একটি জাহাজ চলাচল করছে। তাতেই প্রতিদিন ৬০০/৭০০ করে পর্যটক আসা যাওয়া করছেন।
শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত অন্তত ২ লাখ পর্যটক নেমেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচ পুলিশের ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, কোথাও ঠাঁই নেই। পর্যটকরা নীল জলরাশিতে গোসলে নেমে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন। আমরাও সবসময় নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছি। তবে শুক্রবার হালকা বৃষ্টি হওয়ায় পর্যটকরা হোটেলে সময় কাটাচ্ছেন।
দুপুর ৩ টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, কেউ টায়ার টিউব নিয়ে সমুদ্রে গা ভাসাচ্ছেন, কেউ আবার ওয়াটার বাইকে দূর সাগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেকে ঘোড়া ও বিচ বাইকে চড়ে সমুদ্র সৈকত উপভোগ করছেন। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় লাইফ গার্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বিচ কর্মীদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম আসা আমজাদ বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি, মেলা উপলক্ষে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে। অথচ গত বছর যে হোটেল ২ হাজার টাকা নিয়েছে, এ বছর একই মানের হোটেল রুম ৩ হাজার টাকা নিয়েছে। এটা তো পর্যটকদের সাথে এক প্রকার প্রতারণা করেছে।
কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক সুমন বলেন, মেলা উপলক্ষে ফেসবুকে বিশেষ ছাড়ের কথা শুনে ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু থাকা-খাওয়ায় ছাড় দিচ্ছে না।
কক্সবাজার জেলা রেঁস্তোরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতেও আমরা সূলভ মূল্যে খাবারের দাম রাখছি। তালিকার বাইরে খাবারের অতিরিক্ত মূল্য রাখা যাবে না। যদি কোনো হোটেল-রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মূল্য রাখার অভিযোগ পাই, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, শনিবার পর্যন্ত শহরের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট-গেস্ট হাউসের সব কক্ষ ভাড়া হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেনের নেতৃত্বে হোটেল মোটেল ও রেস্টুরেন্টে মনিটরিংয়ে নেমেছেন। তিনি জানান, পর্যটকদের সাথে এরকম কেউ প্রতারণা বা হয়রানি করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পুরো সমুদ্র সৈকত সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালকে ঘিরে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দিতে আমরা সব সময় সতর্ক রয়েছি।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, বাংলাদেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারকে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে মৌসুমের শুরুতেই পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে। এ জন্য পর্যটনসেবা-সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কক্সবাজারের মেলা উপলক্ষে প্রচারণাও চালানো হয়েছে।