সিসিএন ডেস্কঃ
দেশজুড়ে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ২৮ দিনের মতো চলছে এই অবস্থা। আজ শনিবার (২৭ এপ্রিল) পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
এর মধ্যেই দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার উদ্ধৃতি দিয়ে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, ‘নাসা জানিয়েছে ‘নওতাপ ২০২৪’ নামে গরমের ভিন্ন এক দশা আসছে। আগামী ২৫ মে থেকে শুরু হবে নওতাপ। সূর্য প্রতি বছর যে সময় রোহিণী নক্ষত্রে অবস্থান করে, সেই সময়টায় সবেচেয়ে বেশি গরম পড়ে।’
নাসা আরও জানিয়েছে, ‘আগামী ২৫ মে সূর্য রোহিণী নক্ষত্রে প্রবেশ করবে। ১৫ দিন রোহিণী নক্ষত্রে অবস্থান করে মৃগশিরা নক্ষত্রে গোচর করবে সূর্য। রোহিণী নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থানের এই ১৫ দিন সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হয়। সূর্য রোহিণী নক্ষত্রে ১৫ দিন থাকলেও তার মধ্যে প্রথম ৯ দিন গরম সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই ৯ দিনকে নওতাপ বলা হয়। এই বছর নওতাপ চলবে আগামী ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত।’
নাসাকে উদ্ধৃত করে দাবিটি ফেসবুকের বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ ‘সাইকোলজি এবং বিজ্ঞানের অজানা তথ্য’, ‘বিজ্ঞানবলয়-Bigganboloy’সহ বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপ থেকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। নওতাপ ও গরম নিয়ে এমন কোনো কিছু কী জানিয়েছে নাসা? খুঁজে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
‘নওতাপ’ আগমন এবং মে-জুন মাসে আরও বেশি গরম পড়ার দাবিতে পোস্ট। ছবি: ফেসবুক
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে নাসার ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো খুঁজে ‘নওতাপ’ নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই সময়ে গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) ‘Summer 2024: এখনো কিছুই নয়, ২৫ মে থেকে শুরু হবে আসল গরম! সূর্য রোহিণী নক্ষত্রে এলে জ্বলে-পুড়ে যাবে চারদিক’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে জ্যোতিষীদের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, চলতি বছরের ২৫ মে থেকে নওতাপ আসছে। সূর্য প্রতি বছর যে সময় রোহিণী (Aldebaran বা আলদেবারান) নক্ষত্রে অবস্থান করে, সেই সময়টায় সবেচেয়ে বেশি গরম পড়ে।
তাতে উল্লিখিত তথ্যানুযায়ী, আগামী ২৫ মে সকাল ৩টা ১৬ মিনিটে সূর্য রোহিণী নক্ষত্রে প্রবেশ করবে। ১৫ দিন রোহিণী নক্ষত্রে অবস্থান করে মৃগশিরা নক্ষত্রে গোচর করবে সূর্য। রোহিণী নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থানের এই ১৫ দিন সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হয়। সূর্য রোহিণী নক্ষত্রে ১৫ দিন থাকলেও তার মধ্যে প্রথম ৯ দিন গরম সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই ৯ দিনকে নওতাপ বলা হয়। এই বছর নওতাপ চলবে আগামী ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত।
প্রতিবেদনের দাবি অনুযায়ী, কেবল জ্যোতিষী গণনায় নয় নওতাপের বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও রয়েছে। রোহিণী নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থানকালের প্রথম নয় দিন সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব সবচেয়ে কমে আসে। জ্যোতিষশাস্ত্রে এই নয় দিনকেই নওতাপ বলা হচ্ছে। নিজের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে এই সময় পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের সবচেয়ে নিকটে চলে আসায় এই নয় দিন তীব্র গরম অনুভূত হয়। এই সময় সূর্য কিরণ সরাসরি পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এসে পড়ে।
প্রতিবেদনে উল্লিখিত এসব তথ্যের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া তথ্যের মিল পাওয়া যায়। যদিও প্রতিবেদনটির কোথাও নাসার কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
‘নওতাপ’ কী? এটি কী নতুন কিছু?
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস নাউ নিউজে ‘নওতাপ’ সম্পর্কে আলোচনা পাওয়া যায়।
এর ধারণা নতুন নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সনাতন ধর্মের বিশ্বাস এবং কিছুটা বিজ্ঞান। ছবি: টাইমস নাউ নিউজ
২০২৩ সালের ১৭ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে ‘নওতাপ’ সম্পর্কে বলা হয় ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, ‘নওতাপ’ অর্থ তীব্র গরমের নয় দিন। ‘নওতাপ’ শুরু হয় যখন সূর্যদেব ১৫ দিনের জন্য রোহিণী নক্ষত্রে প্রবেশ করেন। এই ১৫ দিনের মধ্যে প্রথম ৯ দিনকে গ্রীষ্মকালের সবচেয়ে উষ্ণ বলে মনে করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, সূর্য যখন জ্যেষ্ঠ মাসে রোহিণী নক্ষত্রে থাকে, তখন সূর্যের রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে পড়ে, যার ফলে সেই দিনগুলোতে তীব্র গরম হয়। ২০২৩ সালের নওতাপ সংগঠিত হয় ২২ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত।
এর আগের বছরের তথ্য খুঁজে দেখা যায়, গড়ে প্রতি বছরই মে মাসের শেষদিক থেকে শুরু হয়ে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই ‘নওতাপ’ সংগঠিত হয়। ২০২২ সালের ‘নওতাপ’ ও ২৫ মে থেকে শুরু হয়ে ২ জুন পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, সনাতন শাস্ত্র ভগবৎ গীতায় পাওয়া ‘নওতাপের’ ধারণা বাস্তবে নতুন কিছু নয়। বিজ্ঞানের সঙ্গেও এর সম্পর্ক পাওয়া যায়। কারণ, এই সময় অর্থাৎ মে-জুন মাসের দিকে নিজের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের কাছাকাছি আসতে থাকে এবং জুনের ২০ বা ২১ জুন বছরের অন্যান্য যেকোনো দিনের তুলনায় সবচেয়ে দিনের আলো পাওয়া যায় এবং উত্তর গোলার্ধ সূর্যের কাছাকাছি থাকে। সূর্য এদিন কর্কটক্রান্তি রেখায় লম্বভাবে বা খাঁড়াভাবে কিরণ দেয়। ফলে এ সময় অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি গরম অনুভূত হতে পারে।