শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫

বিয়ে করতে ভয় পাওয়া এই ফোবিয়ার নাম ‘গ্যামোফোবিয়া’

সিসিএন অনলাইন ডেস্কঃ

বিয়েতে ভয় পাওয়া গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্তের বৈশিষ্ট্য কি কি?

ইদানীং প্রায়শই বাবা-মায়ের একটি বিষয় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে, সেটি হলো সন্তানেরা বিয়ে করতে অনিচ্ছুক। যদিও এটা আমাদের সমাজে ইদানিংকার ঘটনা, কিন্তু পাশ্চাত্য বাদ দিলেও সিঙ্গাপুর বা জাপানসহ যেসব দেশকে আমরা এশিয়ার বাঘ বলে জানি, সেখানেও দেখবেন বিয়ে করতে অনিচ্ছুক তরুণদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এর নানাবিধ কারণের মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে ভয়। মনস্তাত্ত্বিক ভাষায় যাকে ফোবিয়া বলে। বিয়ে করতে ভয় পাওয়া এই ফোবিয়ার নাম গ্যামোফোবিয়া।

এই শব্দের উৎপত্তি গ্রিক ভাষা থেকে। যেখানে গ্যামো মানে বিয়ে, আর ফোবিয়া মনে ভয়। এটি দুশ্চিন্তাজনিত ব্যাধির পর্যায়ে পড়ে। যা আক্রান্ত ব্যক্তিকে তীব্রমাত্রায় ভয় অনুভব করায় অথবা ভয়জনিত চিন্তায় আচ্ছন্ন করে রাখে। গ্যামোফোবিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিয়ে বা যেকোনো স্থায়ী সম্পর্কে অঙ্গীকার করতে ভয় পান। সহজ ভাষায় রোমান্টিক বা বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্রতিশ্রুতিভীতি কাজ করে।

১৯৮৭ সালে ‘মেন হু কান্ট লাভ’ নামের একটি বইতে প্রথম কমিটমেন্ট ফোবিয়া (প্রতিশ্রুতি ভীতি) শব্দটি উল্লিখিত হয়। পরবর্তীতে শুধু পুরুষের মধ্যে প্রতিশ্রুতিভীতির কথা ইঙ্গিত করায় এই বইয়ের ব্যাপক সমালোচনা হয়। ফলে ১৯৯৫ সালে ‘হি ইজ স্কেয়ারড, শি ইজ স্কেয়ারড’ নামে একই লেখক লিঙ্গ নিরপেক্ষ দ্বিতীয় বইটি লেখেন।

গ্যামোফোবিয়া কী?

কাউকে কথা দিতে, বিয়ে করতে অথবা অর্থপূর্ণ আন্তঃসম্পর্ক থেকে আনন্দ পেতে একজন মানুষ যখন ভয় পান এবং এই ভয় যখন তীব্রমাত্রা ধারণ করে, তখন তাকে গ্যামোফোবিয়া বলে। এর কারণ হিসেবে বিবাহ বিচ্ছেদ, প্রেমের অবসান বা চলতি কথায় ব্রেকআপ, ছোটবেলায় নিজেকে পরিত্যক্ত বোধ করা ইত্যাদি নানাবিধ কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। কোন কোন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ধরে রাখতে পারেন না। যেমন– কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবেন, কোন পেশা বেছে নেবেন, কোথায় থাকবেন। কিন্তু এই ভয়ের সঙ্গে গ্যামোফোবিয়ার সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। গ্যামোফোবিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তি শুধু ব্যক্তিগত আন্তঃসম্পর্কে অঙ্গীকার করতে ভয় পান। হীনম্মন্যতা কিংবা নিজের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত মোহে আবদ্ধ মানুষদেরও গ্যামোফোবিয়া হতে পারে।

গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য
১. দীর্ঘমেয়াদি ঘনিষ্ঠ রোমান্টিক সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারা।
২. হাসিখুশি যুগলকে দেখলে দুশ্চিন্তা অনুভব করা।
৩. হঠাৎ করে সম্পর্কে বিচ্ছেদ টানা।
৪. কেউ কাছে আসতে চাইলে তাকে দূরে চলে যেতে বলেন।
৫. যেকোনো রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তাবোধ করেন এবং সব সময় ভীত হয়ে ভাবতে থাকেন, এই সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে।

কারা ঝুঁকিপূর্ণ
যারা নানা ধরনের ব্যক্তিত্বের ব্যাধিতে আক্রান্ত, তারা প্রতিশ্রুতি দিতে ভয় পান। আবার যারা অন্যকে সহজে বিশ্বাস করতে পারেন না, তারা অন্যের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করতে ভয় পান।

লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্রাক্টিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ

আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর

error: Content is protected !!