শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩

সহায় সম্বলহীন রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে এখন অস্ত্র

সাইদুল ফরহাদ :

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে সন্ত্রাসীদের মাঝে বাড়ছে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনায় সন্ত্রাসীরা ভারি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত এপিবিএন এর তথ্য মতে, ৯৪১টি দেশী বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে তারা। এসব ঘটনায় ৩৯৮ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।এসব অস্ত্র মিয়ানমার এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্যাম্পের সন্ত্রাসীদের হাতে যাচ্ছে।

 ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি আমির জাফর বলেন,সীমান্তের ওপার দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ওপার থেকে বিভিন্নভাবে অস্ত্র ঢুকছে। সন্ত্রাসীরা এসব অস্ত্র দিয়ে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ প্রভাব বিস্তারের ব্যবহার করছে। মূলত ক্যাম্পে নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত ভলানটিয়ার সিস্টেম ভাঙতে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের ব্যবহার করছে। কারণ ভলান্টিয়াররা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। ক্যাম্পে অস্ত্র উদ্ধারেও অভিযান চলছে। আমরা এই পর্যন্ত ৯৪১টি দেশী বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করি এসব ঘটনায় ৩৯৮ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে আশ্রয় শিবিরে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝানিতে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা। সেইসাথে আতঙ্কে থাকা স্থানীয়দের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ  অভিযান চালিয়ে যেন সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

উখিয়া বালুখালীর স্থানীয় বাসিন্দা করিম বলেন,আমরা অনেক আতঙ্কে আছি। রাতে ঘুমাতে পারি না গুলির শব্দে। এবং এসব রোহিঙ্গাদের চাঁদা না দিলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সন্তানদের নিয়ে অনেক চিন্তিত আমি। জানি কখন কী হয়ে যায়।এখানে জীবনের নিরাপত্তা নেই।

টেকনাফ উনছিপ্রাং ২২নং ক্যাম্পের সাথে লাগোয়া বাংলাদেশি বাসিন্দা নূর আলম বলেন, ক্যাম্পে ভিতরে এবং বাহিরে কয়েকটি  সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে। এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেন আমাদের এলাকার কয়েকজন। এসব সন্ত্রাসীরা নির্বাচন ও বিভিন্ন জায়গা দখলেও ভাড়া যায়। তাদের কথামতো না চললে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে।

কক্সবাজার জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু বলেন,রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর অস্ত্রের ঝনঝনানির ভয় তাড়া করে স্থানীয়দের। 

অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অনেক স্থানীয়দের অপহরণ করেছে, খুন করেছে রোহিঙ্গারা। তাই সম্পূর্ণ অনিরাপদ জীবন যাপন করছে স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে স্থানীয়দের সুরক্ষা দিতে বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

উখিয়া হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কারণে আতঙ্কে দিন পার করছেন স্থানীয়রা। তাই এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর দাবি তুলেন এই জনপ্রতিনিধি।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, গত আট মাসে আশ্রয়শিবিরগুলোয় ৫১টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৬০ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। অধিকাংশ খুনের ঘটনা আরসার সঙ্গে আরএসও এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনীর মধ্যে। সংঘর্ষে আরসার ১৮ সদস্য, আরএসওর দুজন নিহত হন। ছয় বছরে আশ্রয়শিবিরগুলোয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি এবং পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ১৮৯ রোহিঙ্গা।

পুলিশের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের তুলনায় আশ্রয়শিবিরে হত্যার ঘটনা বেড়েই চলছে। ২০১৭ সালে আশ্রয়শিবিরগুলোয় হত্যাকাণ্ডে ঘটনায় ৮ মামলায় আসামি ছিল ২২ জন। ২০১৮ সালে ১৫ হত্যা মামলায় আসামি ৩৩ জন, ২০১৯ সালে ২২ হত্যা মামলায় আসামি ১০৭ জন, ২০২০ সালে ১৩ হত্যা মামলায় আসামি ১২৩ জন, ২০২১ সালে ১৩ হত্যা মামলায় আসামি ৬৫ জন, ২০২২ সালে ২০ হত্যা মামলাতে আসামি ২৩৭ জন এবং চলতি ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত পৌনে আট মাসে ৪০টি হত্যা মামলাতে আসামি করা হয় ৪০৪ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে।

এ ছাড়া গত ছয় বছরে আশ্রয়শিবিরে ৪৪টি অপহরণ, ৯৪টি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টা, ২৩৮টি অস্ত্র মামলাতে আসামি করা হয়েছে অন্তত এক হাজার রোহিঙ্গাকে।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ কমাতে অতি শীঘ্রই  যৌথ বাহিনীর অভিযান চালানো হবে। অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না।

আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর