রিজন বড়ুয়া:
কক্সবাজারের সাংবাদিকতার কথা আসলেই ক্ষণজন্মা আবদুর রশীদ সিদ্দিকীর কথা বলতে হয়। কক্সবাজারে যখন ধর্মান্ধতা, আধুনিক শিক্ষার প্রতি অনীহা এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল তখনই এই মানুষটি উদার মানসিকতা,সাহস আর প্রতিভাকে পুঁজি করে সাংবাদিকতা ও সাহিত্য কর্মে নিজেকে মনোনিবেশ করেন।
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কাকারা নিবাসী এই ক্ষণজন্মা বিরলতম প্রতিভাবান ব্যক্তি ১৯১৯ সালের এপ্রিল মাসে “সাধনা” নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি চট্টগ্রামের হাজারী লেনের হার্ডিঞ্জ প্রেস ও আন্দরকিল্লাস্থ মিন্টো প্রেস থেকে প্রকাশিত হতো। প্রথমে আবদুর করিম সাহিত্য ও আবদুর রশীদ সিদ্দিকীর যৌথ সম্পাদনায় ” সাধনা” প্রকাশিত হতো। এতে প্রকাশিত হতো কবিতা,গল্প, ভ্রমণ কাহিনি, জীবন চরিত,নাটক প্রভৃতি।
একসময় সাধনা বন্ধ হয়ে গেলে আবদুর রশীদ সিদ্দিকী সাপ্তাহিক ‘মুসলেম জগৎ ‘ নামে একটি বড় মানের সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পরে সেটি বন্ধ হয়ে গেলে ‘ সাপ্তাহিক রক্তকেতু’ ও ‘কক্সবাজার হিতৈষী’ বের করেন। তাই আবদুর রশীদ সিদ্দিকী কক্সবাজার পত্রিকা প্রকাশনা জগতের প্রথম পুরুষ হিসেবে ধরে নেয়া যায়। তার পত্রিকা গুলো কক্সবাজারবাসীর জন্য আলোর দিশারী ছিল নিঃসন্দেহে।
এছাড়াও সমাজ সচেতন কবি কথাসাহিত্যিক হিসেবেও আবদুর রশীদ সিদ্দিকী’র পরিচিতি রয়েছে। তিনি দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে সাতটি উপন্যাস, ১২টি কাব্য, ৩টি গবেষণা ও ২টি প্রবন্ধগ্রন্থ, একটি জীবনীগ্রন্থ, দুইটি অনুবাদগ্রন্থ ও একটি আত্মজীবনী রচনা করে বাংলা সাহিত্যে নিজেকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে: রুস্তম সোহরাব,কলির বাঙ্গালা, জরিনা,চট্টগ্রামী ও রোমাইতত্ত্ব, চট্টগ্রামের ভাষাতত্ত্ব, হযরত আমীর হামজার জীবনী সহ অসংখ্য গ্রন্থ লিখেছেন এই ক্ষণজন্মা। আবদুর রশিদ সিদ্দিকী ১৯৫১ সালের ২৬ মার্চ নিজ গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন।
