মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৪

‘স্মরণশক্তিকে মেধা বলে চালানোর মানসিকতা থেকে বেরোতে হবে’

সিসিএন অনলাইন ডেস্ক:

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান শিক্ষাক্রমের শিখন পদ্ধতি ভিন্ন। গতানুগতিক শিক্ষার ধারণা থেকে এই পদ্ধতি ভিন্ন। এটা অভিজ্ঞতানির্ভর। মুখস্থনির্ভর শিক্ষা এবং স্মরণশক্তিকে মেধা বলে চালিয়ে দেওয়ার যে মানসিকতা সেখান থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে আমরা স্মার্ট প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারব না।

মঙ্গলবার (১৪ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন প্রজেক্টে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট প্রজন্ম গড়তে শিক্ষায় যে রূপান্তরের কাজ চলছে তার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ১৬ বছর পর্যন্ত কম খরচে দেশের সকল শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।

বর্তমান শিক্ষাক্রমের মূলনীতি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, জ্ঞান, মান এবং দক্ষতা- এই তিনটির সমন্বয়ে হবে আমাদের শিক্ষা। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, সমতা, জাতীয়তাবোধ, কর্মমুখী শিক্ষা ও দক্ষতা প্রভৃতি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। প্রক্রিয়াগত কারণে অথবা অর্থের অভাবে যেন কোনো শিক্ষার্থী ঝরে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

‘স্মরণশক্তিকে মেধা বলে চালানোর মানসিকতা থেকে বেরোতে হবে’
চাকরির বয়সসীমা নিয়ে আমার করা সুপারিশের কার্যকারিতা নেই : শিক্ষামন্ত্রী
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ‘লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন প্রজেক্ট (লেইস)’ বাস্তবায়ন করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. অ্যাবদুলেই সিক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, ইআরডি, আইএমইডি ও প্লানিং কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংস্থার প্রধান, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও অংশীজন উপস্থিত ছিলেন।

একনজরে লেইস প্রজেক্ট

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ‘লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন (লেইস)’ প্রজেক্ট গৃহীত হয়েছে। অক্টোবর ২০২০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৮ পর্যন্ত মেয়াদে প্রজেক্টটি বাস্তবায়িত হবে। লেইস প্রজেক্ট গত বছরের ৩১ অক্টোবর একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশিরভাগই ঋণ হিসেবে দিবে উন্নয়ন অংশীদার বিশ্বব্যাংক। প্রকল্প ঋণ হিসেবে ৩০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমপরিমাণ ৩ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা (৯৮ দশমিক ৫০শতাংশ) দিবে সংস্থাটি। অন্যদিকে সরকারের বিনিয়োগ ৪৮ কোটি টাকা (১ দশমিক ৫০ শতাংশ)। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে লেইস প্রজেক্ট গ্রহণের জন্য সরকারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় গত বছরের ২২ নভেম্বর।

শিখন ঘাটতি নিরসনে ও নতুন শিক্ষাক্রমের চাহিদা পূরণে সরকার বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় লেইস প্রজেক্ট গৃহীত হয়েছে। লেইস প্রজেক্ট ৩টি মূল লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেগুলো হলো- মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শিখন ত্বরান্বিত ও ধরে রাখার হার বৃদ্ধি, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা ও সহনক্ষমতা উন্নয়ন।

লেইস প্রজেক্টের কাজ

প্রশিক্ষণ : মাধ্যমিক পর্যায়ের মোট ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯০ জন শিক্ষককে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এর মধ্যে স্কুলের শিক্ষক ২ লাখ ৭০ হাজার ৮১০ জন ও মাদ্রাসার ৯৭ হাজার। প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে- মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং, নতুন শিক্ষকদের জন্য বেসিক ট্রেনিং, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানদের জন্য (স্কুল ও মাদ্রাসা) লিডারশিপ ট্রেনিং, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন, কাউন্সেলিং ও বুলিং প্রতিরোধ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, ব্লেন্ডেড লার্নিং বিষয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, লাইব্রেরিয়ানদের জন্য প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের জন্য আইসিটিবিষয়ক প্রশিক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির নিমিত্তে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন

মাধ্যমিক পর্যায়ের ১০ হাজার ৩৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে ২টি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৯২৮টি স্কুল ও ৩ হাজার ৪১২টি মাদ্রাসা।

লাইব্রেরি উন্নয়ন

সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মোট ২৯ হাজার ৫৮৫টি প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরির অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। এরমধ্যে স্কুল ১৮ হাজার ৮৯৪টি, স্কুল ও কলেজ ১ হাজার ৪২০টি এবং মাদ্রাসা ১ হাজার ২৯১টি। এছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৯ হাজার ৫৮৫টি প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ করা হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন, বুলিং প্রতিরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি

মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং প্রতিরোধে পাইলট ভিত্তিতে ৫১৭টি প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে অংশীজনদের জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান।

আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর

error: Content is protected !!