মিজানুর রহমান:
কক্সবাজার পৌরসভা থেকে হেটে গেলেই পাঁচ মিনিটের পথ। সবচেয়ে সুন্দর সেতু ও সড়ক। সেতু-সড়কের পাশেই বাঁকখালী নদী আর কয়েকটি জলাভুমি। যা ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে গোটা এলাকা। পরিবেশগতভাবে অনেকটা হাওর অঞ্চলের মতো।
শহরে দীর্ঘদিনের পৌরসভার আবর্জনার পাহাড়, তার মাঝেই ফুল ফুটিয়েছে এলজিইডি। বাঁকখালীর নদীর দুই পাড়ের বন্ধনে যুক্ত হয়েছে নতুন এ সেতু। নদীর দু’পাড়ের মানুষের নতুন করে এক করতে সহসাই দ্বার খুলছে সেতুটি। আগামী ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরেই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে জেলা শহরের সর্বপ্রথম ব্যয়বহুল ও আধুনিক এই সেতু।
এছাড়াও এলাকাটিকে আগামীর বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হচ্ছে। সেতু নির্মিত হওয়ায় অর্থনীতিতে ধারুন এক সম্ভাবনা দেখছে সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (৬ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উদ্বোধনের আগেই দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষের আগমন ঘটছে। বিকেলে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনায় মুখরিত হয় এই সেতু এলাকা।
কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে সমতিপাড়া থেকে আসা রহিম বলেন, শহরে নতুন সেতু তৈরি হয়েছে সবাই বলে খুব সুন্দর হয়েছে তাই আমিও দেখতে এলাম। এসে সেতু দেখে আমি মুগ্ধ হলাম ।
ঝিলংজার লিংকরোড় এলাকা থেকে আসা মুন্নি নামে এক তরুণী বলেন, তার বাড়ি সেতু এলাকা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। ফেসবুকে দেখে তিনি সেতুটি দেখতে এসেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃত প্রকাশ করেন তিনি।
বাঁকখালী নদীর পারের খুরুশকুল এলাকার আনেয়ার জানান , যখন এই সেতুটি ছিল না তখন আমাদের কক্সবাজার শহরে আসতে অনেক কষ্ট হত ৷ এমনকি আসতে হতো নৌকা পারাপারে। এতে আমরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে থাকতাম । এখন সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় আমরা সহজেই ও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শহরে প্রবেশ করতে পারব৷ এলাকাবাসীর জন্য সুবিধা হয়েছে সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে যাতায়াত সহজ হয়েছে।
রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজারের সভাপতি এইচ এম নজরুল ইসলাম দৈনিক গণকন্ঠকে বলেন- খুরুশকুলের সঙ্গে শহরের দুরত্ব আগে প্রায় ৩০-৪০ মিনিটের। সেতু হলে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। সেতু ও তার আশে-পাশে এলাকা ঘিরে স্বপ্ন দেখাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার। এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বেশকিছু সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস. এম সাদ্দাম হোসেন দৈনিক গণকন্ঠকে বলেন- জায়গাটিতে ময়লা-আবর্জনা ছিল। সেখান থেকে সরকার উন্নয়ন করেছে। যে সেতুটি নির্মাণ করেছে তা দুই পাড়ের মানুষের যাতায়তের সংযোগ ঘটাবে না। দুই পাড়ে তৈরি হবে পর্যটনের নতুন হাব। এছাড়াও খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প হয়েছে। পাশাপাশি একটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
কক্সবাজার সদর,রামু ও ঈদগাঁহ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল দৈনিক গণকন্ঠকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারবাসীর জন্য বিভিন্ন মেগা প্রকল্প উপহার দিয়েছে। শুধু কক্সবাজারবাসী উপকৃত হবে না,পর্যটকসহ দেশি-বিদেশি পর্যটক অল্প খরচে অল্প সময়ে কক্সবাজারে ভ্রমণ করতে আসতে পারবে।জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে, তাই ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে।
খুরুশকুলবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন এখন দৃশ্যমান। এই সেতু শুধুমাত্র দুই পাড়ের সংযোগ ঘটায়নি, নতুন করে সংযোগ স্থাপন করবে খুরুশকুলের অর্থনীতিতে। এলাকার সচেতনমহলরা বলছেন- উদ্বোধন হলে এই সেতু আর বাঁকখালী নদীর প্রকৃতি ঘিরে হবে কক্সবাজারের নতুন পর্যটন জোন।
এলজিইডি বলছে- ২০১৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজে বিগ্নতা ঘটাতে পারেনি কোন কিছুই৷ ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে তাই সময়সীমার আগেই চূড়ান্ত করে বুঝিয়ে দিতে পারবে বলে সন্তুষ প্রকাশ করছে এলজিইডি কর্মকর্তারা।
২শ ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ এই সেতুতে ৩টি ৬৫ মিটার গভীরের স্পান এবং ৫০ মিটারের ১০টি স্প্যান রয়েছে। এতো দীর্ঘ সেতু এর আগে কখনো দেশীয় নকশায় তৈরি হয়নি দাবি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের।
এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন খান দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন- এলজিইডি দায়িত্ববার গ্রহণের পর থেকে স্বচ্ছভাবে কাজ করেছে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই কাজটি বুঝিয়ে দিতে পারার আশা তাদের। নদীর দুইপাড়ে আরও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে৷
তিনি আরও বলেন- আগামী ১১ নভেম্বর উদ্বোধনের পর জনসাধারন জন্য খুলে দেয়া হবে দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি ৷