সোমবার, অক্টোবর ২, ২০২৩

৭১’এর পর জন্ম নেয়া প্রায় দুই হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা

জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যে তাদের বয়স ৫০–এর নিচে

নিউজ ডেস্ক:
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের কারও জন্ম ১৯৮২ সালে, কারও আবার ১৯৯১ সালে। এরপরও তাঁদের নাম রয়েছে ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়। এমন প্রায় দুই হাজার জনের তথ্য পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, যাঁদের জন্ম (পরিচয়পত্রের তথ্যে) মুক্তিযুদ্ধের পরে। ভুলে এমনটি হয়েছে, নাকি অনিয়ম–জালিয়াতি করে কারও কারও নাম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ঢুকেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের পরিপত্র অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধার (গেজেটভুক্ত) বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস ছিল, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সে হিসাবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স হবে সাড়ে ৬১ বছর।

মন্ত্রণালয় বলছে, প্রায় দুই হাজার জনের বয়স ৫০ বছরের কম হওয়ার কারণ কী, তা তদন্ত করে দেখা হবে। তবে এতজনের বয়সের তথ্য ভুল হওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি যতটা সাদামাটা ভাবা হচ্ছে, ততটা নয়। দু-একজনের ভুল হতে পারে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের জানার কথা নয় কার বয়স কত। জন্মসনদ, নাগরিকত্ব সনদসহ যেসব কাগজপত্র দেওয়া হয়, তার ভিত্তিতেই জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয়। অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী বয়স কমান, বাড়ান। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে একজনের কাগজ আরেকজন ব্যবহার করে জালিয়াতি করতে পারেন। যদি মন্ত্রণালয় তালিকা পাঠায়, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য এবং সরকার অনুমোদিত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই করেই ভাতাপ্রাপ্ত সব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম গত অক্টোবরে সরকার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) নামের একটি সফটওয়্যারে যুক্ত করে। নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয় লাল মুক্তিবার্তা, ‘ভারতীয় তালিকা’ ও ‘গেজেট’। এতে দেখা গেছে, ১ লাখ ৯২ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা পাঠানো হতো। কিন্তু এমআইএসে তাঁদের নামসহ অন্যান্য তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার পর সংখ্যাটি ১ লাখ ৭১ হাজার হয়ে যায়। এখন এই ১ লাখ ৭১ হাজারের মধ্যে প্রায় দুই হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার বয়সে গরমিল পেয়েছে মন্ত্রণালয়। পরিচয়পত্র অনুযায়ী, যাঁদের বয়স ৫০ বছরের নিচে।

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এখন মাসিক ১২ হাজার টাকা ভাতা (২০১৯ সালের জুলাই থেকে) পাচ্ছেন। এর আগে ছিল ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, ৫ হাজার টাকা বিজয় দিবসের ভাতা এবং ২ হাজার টাকা বাংলা নববর্ষ ভাতা পান বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বছরে একজন সব মিলিয়ে ভাতা পান ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম এমআইএসে যুক্ত হয়েছে, তাঁদের কোনো তথ্যে ভুল থাকলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা সংশোধন করার সুযোগ দিয়েছে। এ ছাড়া কোনো ভুলের কারণে ভাতা থেকে কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ পড়লে তা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আবেদন করতে বলেছে মন্ত্রণালয়।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গত দুই দিনে ২০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য হিসাবে নিলে যাঁদের বয়স ৫০ বছরের নিচে; তাঁদের একজন সুনামগঞ্জের নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জন্ম ১৯৫১ সালে। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে লেখা আছে ১৯৯১ সাল। জাতীয় পরিচয়পত্রের হিসাবে নজরুল ইসলামের বয়স ২৯ বছর।
যখন পরিচয়পত্র হাতে পেলেন, ভুল দেখলেন, তখন কেন ঠিক করলেন না—জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, করা হয়ে ওঠেনি। ৩১ ডিসেম্বরের আগে এই পরিচয়পত্র সংশোধনের বিষয়টি তিনি জানেন কি না, জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়ে কেউ কিছু তাঁকে জানায়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খোরশেদ আলম খন্দকারের নাম রয়েছে ‘সেনা গেজেটে’। পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ ১৯৮৭ সালের ৫ এপ্রিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জন্ম ১৯৪৭–এর দিকে হতে পারে। তাঁর দুই ছেলে বিদেশে থাকেন। এক ছেলের বয়স ৪০। তিনি বলেন, পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধনে অনেকবার নির্বাচন কমিশনে গেছেন কিন্তু ঠিক করাতে পারেননি।
জাতীয় পরিচয়পত্রে আবদুর রহমানের জন্ম ১৯৮৩ সালের ১২ এপ্রিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘লেখাপড়া জানি না। আমার কাছে স্কুলের প্রত্যয়নপত্র চেয়েছে। আমি কোথায় পাব।’ সাতক্ষীরার আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিক করাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে শুধু ঘোরায়।’
উল্লেখ্য, ২০০৮ সাল থেকে ১৮ বছর বয়সী বাংলাদেশের নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এই কাজ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে হয়তো অনেকের বয়স ভুল লেখা হয়েছে। এটি সংশোধনের সুযোগ আছে। তবে অনিয়ম করে কারও নাম তালিকায় ঢুকেছে কি–না সেটি তদন্তের আগে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কেউ অনিয়ম করে থাকলে তার নামও বাদ যাবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর