সোমবার, মে ২০, ২০২৪

‘এপ্রিল ফুল’ এর সঙ্গে কি আসলেই মুসলমানদের ট্র্যাজেডি জড়িত?

সিসিএন অনলাইন ডেস্কঃ

বাংলাদেশে একটা ধারণা প্রচলিত রযেছে যে, এপ্রিল ফুলের সঙ্গে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িত

ইউরোপের দেশগুলোতে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে “বোকা বানাতে” চায়। এ দিনটিকে তাই বলা হয় “অল ফুলস ডে”।

পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে এই দিনে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একইসঙ্গে এইদিনে পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সঙ্গে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা সহকর্মীরাও একে অন্যের সঙ্গে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় “এপ্রিল ফুল”।

যদিও বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে এই দিবসের প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না। বাংলাদেশে একটা ধারণা প্রচলিত রযেছে যে, এপ্রিল ফুলের সঙ্গে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িত।

অনেকেই মনে করেন ১৫ শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলে জানিযেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

তিনি যুক্তারাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, “এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।”

তিনি জানান, সেই সময়ে ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের ওপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সঙ্গে তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, “ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরি করা হয়েছে, যার সঙ্গে কোনো ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, “অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।”

আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর