রবিবার, মে ১৯, ২০২৪

মুখ থুবড়ে পড়েছে পর্যটন বান্ধব ভালো উদ্যোগগুলো

সিসিএন প্রতিবেদক:

অটোচালক কর্তৃক পর্যটক হয়রানি , ক্যামেরাম্যান দ্বারা ছুবি তুলে প্রতারণা, দালাল চক্রের দৌরাত্ম , বিচে হকার-ভিক্ষুক কর্তৃক পর্যটকদের বিরক্ত করা, কটেজ জোনের টর্চার সেল, কিশোর গ্যাং য়ের দৌরাত্ম , ছিনতাই ডাকাতি প্রতিরোধে নানাবিধ উদ্যোগ নিয়ে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন।

পর্যটক হয়রানি রোধে নানাবিধ উদ্যোগ দেখা গেছে গত বছরের মে থেকে। অটো চালক কর্তৃক বাস থেকে নামার পরই পর্যটকদের টানাহেঁচড়া করে বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে গিয়ে টাকা আদায়, মালামাল ছিনিয়ে নেয়া রোধে শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছিল সেই সময়। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অটোচালকদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেয়া, অটোচালকদের আইডি কার্ড প্রদান, দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ , নির্দিষ্ট সংখ্যক অটো চালানো নিয়ন্ত্রণসহ একটি ডাটাবেইজ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তখন কিন্তু এ বছরের শুরু থেকে তার কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছেনা।

চলছেনা কোন অভিযান, অটোচালকদের দ্বারা আগের মতই চলছে পর্যটকদের টানাহেছড়া ও হয়রানি। ক্যামেরাম্যানদের দ্বারা পর্যটক হয়রানি রোধে তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও ভাল ক্যামেরাম্যানদের আইডি কার্ড নেয়ার উদ্যোগও বাস্তবায়ন চোখে পড়েনাই। বীচে অবস্থিত কিটকটের শৃঙ্খলা আনয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নিলেও এখন তা আর মানা হচ্ছেনা। ছিনতাই প্রতিরোধে ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার ও কিশোর গ্যাং গ্রেফতারে যে অভিযান চলত তাও এখন বন্ধ। অপরাধীদের অভয়াশ্রম খ্যাত কটেজ জোনে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে টর্চার সেলের সন্ধ্যান পেয়েছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ , বিভিন্ন কটেজে চলা বে আইনী কার্যক্রম বন্ধ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল তখন, কিন্তু এখন আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে কটেজ জোনের অসাধু ব্যবসায়ীরা। জানা যায় সেই অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন দোর্দণ্ডপ্রতাপে তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

সেই সময় যেসকল পুলিশ সদস্য তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে গিয়েছিল তাদের নামেই এখন নানারকম অভিযোগ দিচ্ছে। হোটেল মোটেল কর্তৃক পর্যটক হয়রানি হলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে কিন্তু এখন আর তেমন দেখা যায় না। পচা শুটকি বিক্রি বন্ধ, রাস্তা ফুটপাতে দোকান উচ্ছেদ, বীচে হকার, ভিক্ষুক, ভ্রাম্যমাণ দেহ ব্যবসায়ী ও হিজরাদের উৎপাত বন্ধে চোখে পড়ার মত কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনা। নারী ও শিশুদের জন্য কলাতলী বীচ এলাকায় একটি ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছিল গত অক্টোবরে, বলা হয়েছিল পর্যায়ক্রমে সকল স্পটে একটি করে ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার স্থাপন করা হবে। কিন্তু নতুন ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার স্থাপনতো দুরের কথা সেটিই এখন বন্ধ থাকে সবসময়। এসকল উদ্যোগ না থাকায় এখন ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সবার মাঝে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে ও অনুসন্ধানে জানা যায় গত মে মাসের শুরুতে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যোগদানের পর থেকেই পর্যটকদের নিরাপত্তায় ও পর্যটনবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নানারকম পদক্ষেপ নিয়েছিল। সেই সকল পদক্ষেপের ফলেই একটি শৃঙ্খলিত বীচ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেই কর্মকর্তা অক্টোবরে বদলি হবার পরই মূলত ধীরেধীরে এসব উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

বীচ ব্যাবসায়ী মঞ্জুর বলেন, টুরিস্ট পুলিশের এখন তেমন কাজ করে না। বীচএলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় চিন্তা কারীদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে । যার কারনে সম্প্রতি সময়ে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।

কক্সবাজার নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল বলেন, টুরিস্ট পুলিশের কোন কার্যক্রম চোখে পড়ে না। ইদানীং বীচ এলাকায় চুরি -ছিনতাই বেড়ে গেছে। যার কারনে পর্যটক বিমুখ হচ্ছে। টুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম আগের মত করার দাবী জানান তিনি।

এসব বিষয়ে সেই সময় কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে , দীর্ঘদিন ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত থাকায় আগে থেকে এসব প্ল্যান ছিল। সবার সহযোগিতায় পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতেই এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। বেশকিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নও করা হয়েছিল। আমার বদলীর পর পরবর্তী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব এগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। তাদের হয়ত ভিন্ন প্ল্যান থাকতে পারে, সেটা আমার জানা নেই। তবে আমার কর্মকালীন সময়ে এই কাজগুলো মিডিয়া ও পর্যটকদের মাঝে বেশ প্রশংসিত হয়েছিল।

এসব বিষয় নিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপারের জিল্লুর রহমানের মুঠোফোন একাধিকবার যোগাযোগ করলেও কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর